Thursday, 18 July 2019

ট্রেনিং পর্ব ১৩

১২ তম পর্বে হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতরের বাড়ী চেনানোর বিষয় নিয়ে চেষ্টা করেছি আমার জানা বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি তুলে ধরার। কিন্তু তার পরেও আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে ১০০% সঠিক কোন পদ্ধতি তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। যাহোক আরো একটি খুব বেশী ব্যাবহৃত পদ্ধতি উল্লেখ করছি, তা হলো কবুতরের মুল খোপ থেকে ধাপে ধাপে কয়েকটি নেট দিয়ে ঘেরা উচু ঘর তৈরী করে তার ভিতর কবুতর ছেড়ে রাখা হয়, ফলে কবুতর বাসা সহ আশেপাশ্বের যতদূর সম্ভব ভালভাবে দেখতে পারে ও যথেষ্ট পোষ মানে। এই পদ্ধতিটা খুব বেশী ব্যাবহার করেন পাকিস্তান, ভারত ও দুবাইয়ের কবুতর পালকরা।প্রয়োজনে আপনারা ইন্টারনেটে এই ধরনের আয়োজন করা অনেক ভিডিও দেখতে পারবেন। আর ইদানিং আমাদের দেশেও অনেকে আরম্ভ করেছেন এইভাবে কবুতর পোষ মানানোর ব্যাবস্থা।
যাহোক বাসা চেনানো আর কবুতর উড়ানো কিন্তু এক কথা না। কেন এই কথা বলছি, আমরা যখন কবুতরকে বাসা চেনাই তা শুধু মাত্র একটা পর্যায় পর্যন্ত কবুতর দেখতে পারে, কিন্তু যখন আকাশে উড়ে, তখন নিশ্চয় কবুতর একই রকম দৃশ্য দেখে না, তাই তখন আবার বাসা ঠিক মত না চেনার কারনে হারায়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে, এইজন্য আমি একটি হাইফ্লাইয়ার কবুতরকে নুন্যতম চার ধাপে বাসা চেনানোর বিষয় হিসাবে ধরি। প্রথম ধাপ বাসার ছাদ সহ আশেপাশ্বের, দ্বিতীয় ধাপ ছাদের থেকে সামান্য উপরে, তৃতীয় ধাপ মাঝ আকাশ খেকে ও চতুর্থ ধাপ টিপ ও ভ্যানিস অবস্থা থেকে। প্রথম তিনটা ধাপ কবুতরকে বাসা চেনানোর ক্ষেত্রে আমাদের হাতে কিছু করনীয় থাকে, কিন্তু চতুর্থ ধাপটি থেকে ফিরে আসবে কি আসবে না এটা একমাত্র কবুতরের নিজেস্ব জাতের গুনে ফিরে আসতে হবে। তবে প্রথম থেকে ধীরে ধীরে বাসা চেনানোর কাজে কবুতরকে সহোযোগীতা করলে আশা করা যায় কবুতর চতুর্থ ধাপ অতিক্রম করে বাড়ীতে ফিরে আসবে।
নতুন কবুতরকে বাসা চেনানোর জন্য আগের থেকে কয়েকটা পোষমানা সহোযোগী কবুতর দরকার হয়। পুরাতন আগের থেকে পোষ মানানো কবুতরের সাথে ছেড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে বাসা সহ আসে পাশ্বের সাথে পরিচয় করায়ে দেওয়া শেষ হলে নতুনদের হালকা দাবড় দিয়ে ছাদের থেকে একটু উপরে উড়ায়ে তাড়াতাড়ি নামায়ে ফেলতে হয়। কোনো অবস্থাতে প্রথম দিকে বেশী দাবড় দেওয়া যাবে না, এতে দূরে কোথাও চলে যেতে পারে অথবা পাশ্বের উচু বিল্ডিং অথবা অনেক সময় উচু গাছে বসে পড়তে পারে এবং পরবর্তিতে সেই সব জায়গায় বসার খারাপ অভ্যাস হয়ে যেতে পারে। কবুতরকে সব সময় কঠিন ভাবে চেষ্টা করতে হবে, নিজের বিল্ডিং / চাল ছাড়া যেন আর কোথাও না বসে, তাহলে এই সব কবুতর নিয়ে ভবিসত্যে ভাল ট্রেনিং ও উড়া পাওয়া দুস্কর।
আসল কথা কবুতরকে ছক বেধে কথনও পোষ মানানো যায় না, এবং এই ভাবে লিখে লিখে নির্দিষ্ট কোন পোষ মানানোর পদ্ধতিও জানানো সম্ভব না। আপনার কবুতর আপনাকেই বুদ্ধি করে ধর্য্য ধরে পোষ মানাতে হবে। আমি যে পূর্বে প্যারায় যে ৪টি ধাপের কথা উল্লেখ করেছিলাম, তার মধ্যে প্রথম ধাপ ২টিতে একজন কবুতর পালকের বুদ্ধি করে ধর্য্য ধরে কিছু করার থাকে আর তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে একজন কবুতর পালকের তেমন করার কিছুই থাকে না, একমাত্র ভাগ্য ছাড়া ও কবুতরের জাতের মধ্যে ভাল বাসা চেনার ক্ষমতার গুন ছাড়া।
যাহোক নতুন পালকেদের শুধু এইটুকু বলবো, কবুতর ভাল উড়াতে চাইলে ও শেষ পর্যন্ত উড়ার পারফর্ম কি দাড়ায় তা দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কষ্ট করে কবুতরকে ভাল ভাবে পোষ মানাতে হবে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ পার করার জন্য অবশ্যই সম্পূর্ন ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হতে হবে।
-------------- চলবে ।
ধন্যবাদ, ধর্য্য ধরে সঙ্গে থাকার জন্য।
*** আমাদের সময়, এই যেমন ৩০-৪০ বছর আগের ঘটনা বলছি, ঐ সময় যদি জানতাম কারোর গিরিবাজ কবুতর তার বাসায় ডিম-বাচ্চা করেছে, তাহলে কোনো অবস্থাতেই ঐ বুড়ো কবুতর বাসায় আনার কথা চিন্তাও করতাম না, কেননা, এমনও হতে দেখেছি দুই পাচ বছর পরেও ছাড়া পেলে প্রথম মালিকের বাসায় চলে যেত, কি ভায়াবহ মেমোরী ও বাড়ীর উপর টান। তাই আমরা সব সময় চেষ্টা করতাম মা-বাবার কাছ থেকে সবে নিজে ১-২ দিন খাওয়া শিখেছে এমন বাচ্চা নিয়ে পোষ মানানোর। এখন ভেবে পাইনা কোথায় গেল সেই সব জাতের কবুতর !!

ছবি ও ভিডিও

লিখেছেন -
Khulna Highflyer

No comments:

Post a Comment

কবুতরের হোমমেড হ্যান্ডফিডিং ফর্মুলা

বরাবরের মতো এইবারও বাচ্চাগুলাকে ওদের বাবা-মা খাবার খাওয়ায়...কিন্তু তারপরেও, আমি প্রতিদিনই ওদের একবার করে হ্যান্ডফিডিং করাই ওদের সুস্বাস্থ...