Thursday, 18 July 2019

ট্রেনিং পর্ব ০৯

মাথার থেকে একদম ফেলে দেন যে, শুধুমাত্র দামিদামি খাবার খেয়েই হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতর ভাল পারফর্ম করে। প্রায় প্রতিটি পর্বে আমি জোর দিয়ে একটা কথা বলে এসেছি, যদি আপনার কবুতরের জাতের মধ্যে দম থাকে, তবে অবশ্যই সে উড়বে। যা হোক আবারো ফিরে যাচ্ছি খাদ্য ব্যাবস্থাপনার উপর। আমাদের একটা সহজ কথা মনে রাখতে হবে, খোপের সব কবুতরের হজমশক্তি কিন্তু সমান না, যেমনটা সব মানুষের হজম শক্তি সমান না। তাই বিবেচনা করে বয়সের ও শারীরিক যোগ্যতার উপর ভর করে প্রতি দিনের খাবার দেওয়া উচিৎ এবং হটাৎ করে বড় ধরনের পরিবর্ত করে নতুন নতুন ধরনের খাবার দেওয়া উচিৎ না। এতে হটাৎ করে হজম বিপাকীয় পদ্ধতিতে সমস্যা হবে, এমন কি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তাই নতুন কোনো খাদ্য দানা সংযুক্ত করতে চাইলে ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিনত করে দেওয়া উচিৎ। তাছাড়া ফ্লাইং লফ্টের যে কবুতর গুলির হজম শক্তি দুর্বল সেগুলোকে আলাদাভাবে নরম খোসাযুক্ত খাবার দিতে হবে এবং প্রয়োজনে আলাদা ভাবে রাখার ব্যাবস্থা করতে হবে।
কি মাপের খাওয়াবেন এবং কতটুকু খাওয়াবেন এটাও কোনো মুখ্য ব্যাপার না, আপনাকে শুধু দেখতে হবে আপনি যে খাদ্য দ্রব্য খাওয়াচ্ছেন তা, রাত্রের মধ্যে সম্পূর্ন হজম হয়ে যাচ্ছে কিনা? এবং পরের দিন সকালে ভোরে খাদ্য থলি একদম শুন্য হয়ে যাচ্ছে কিনা? আর তা শরীরীরে লাগছে কি না? “আর শরীরে লাগছে কিনা?” এটা বুঝাই একজন ভালমাপের কবুতরবাজের বড় গুন ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আপনিও এক সময় হাতে ধরে অনুভব করতে পারবেন, কবুতরটি সুস্থ সবল আছে কিনা? এবং এই অভিজ্ঞতা অর্জন কিভাবে করতে হবে? তার কোনো ধরা বাধা ছক নেই অথবা আমি মনে করি কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিও নেই। সহজ কথা আপনাকে কিছুদিন হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতর হাতে নিয়ে নড়া চড়া করলেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন আশা করি। এটা কোনো সৌখিন কবুতরের বডি ওজনের মত হাতে নিয়ে বুঝার উপায় নেই।হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতর বডি অনেকটা হালকা হবে কিন্তু পাশাপাশ্বি হাতে নিলে যথেষ্ঠ ছটপটে ও শক্তিশালী মনে হবে। আর একটি মজার ব্যাপার হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতর আগাম আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝতে পারে এবং যদি ঝড়-বৃষ্টি ও ঠান্ডার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা থাকে, তখন তারা গা ফুলায়ে খোপের মধ্যে বসে থাকে, তাই দেখে আবার অনেকে ভুল করে ট্রিটমেন্ট আরম্ভ করে দেন। তাই ট্রিটমেন্ট চালু করার আগে, এমন কিছু শরীর গরম করা খাদ্য ( শরীষা দানা ) খেতে দেওয়া উচিৎ, যা খেলে গা ফোলানো বন্ধ করে প্রানচঞ্চলতা দেখাবে।
আপনার হাতের কাছে যে খাদ্যগুলি বেশী সহজলভ্য ও আবহাওয়ার সাথে উপযোগী সেইটাই খাওয়াবেন। কোনো মানুষকে যদি সারা বৎসর ভাল ভাল খাবার খাওয়ানো হয়, সেও এক সময় অসুস্থবোধ করবে। তাই আমার মতামত, কবুতরকেও যখন প্রতিযোগীতায় ও ট্রেনিং এ উড়াবেন, তখনই শুধু এক্সট্রা যত্ন নেবেন ও খাদ্য মান বৃদ্ধি করবেন। আমাদের শুধু কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, উড়ানো কালীন সময়ে এমন কোনো খাদ্য দেওয়া যাবে না, যাতে করে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পায়, কিন্তু যে খাদ্যে প্রচুর শক্তি আছে অথচ ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকবে, যেমন, বাজরা, পপকর্ন, কাওন, ভাল মানের ধান ইত্যাদি। এছাড়া দানাদার খাবারের পাশ্বাপাশি পানির সাথে মাঝে মাঝে ঔষদিগুন সম্পন্ন মশল্লাও ব্যাবহার করতে পারেন, যেমন, কাঁচা হলুদের রস, আদার রস, রশুনের রস, ত্রিফলার পানি, এলাচ-দারুচিনির-লবংগের জাল দেওয়া পানি ইত্যাদি । এগুলি সবই আপনাকে ধীরে ধীরে রপ্ত করতে হবে, এব্যাপারে আমি এই মহূর্তে তেমন কোনো মতামত ও অভিজ্ঞতা প্রকাশ করবো না, কেননা, আমার এখন এই মুহুর্তে একটাই উদ্দেশ্য নতুনদের কাছে প্রমান করে দেওয়া, ভাল কবুতরের জন্য শুধু খাদ্যই তেমন মুখ্য ব্যাপার না, কারন আপনার যদি গাড়ীই ভাল না থাকে, তাতে পেট্রোলের বিকল্প অকটেনের ব্যাবহারে কিছুই যায় আসে না। তাই আমি আশা করছি আমি যখন কবুতরের মুল ট্রেনিং পর্বে চলে যাবো, তখনই অনেকেই বুঝতে পারবেন, তারা কোন মানের কবুতর নিয়ে ফাইট করতে যাচ্ছেন? কেননা, তখনই খুটি নাটি বিষয়গুলি ধরা পড়বে।
যাহোক, খাবার দেওয়ার সময়, কবুতর এ্টা যেন উপলব্ধি করতে না পারে, যে তাকে প্রতি দিন প্রতিযোগীতার মাধ্যমে হুড়ো হুড়ি করে খেতে হবে, তাহলে সে খাওয়ার লোভে না উড়ে আগে আগে নেমে আসার বদ-অভ্যাস তৈরী করবে।বিষয়টা অনেকের কাছে হাস্যকর হলেও খেয়াল করে দেখবেন। তাই অনেক সময় অনেক ভাল মানের কবুতরও এই ধরনের খাওয়ার প্রতিযোগীতায় পড়েে খারাপ হয়ে যায়।সব কিছুই মাথা রেখে চলতে হয়, আর আমি মনে প্রানে একটা কথা বিশ্বাস করি, হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতর পালকরা সব সময় প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন হয় ও সহজে যে কোনো জিনিস ধারন করতে পারেন।
সাধারনত, যখন খেতে দেবেন তখন যেন খুব বেশী না খায়, তার জন্য আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার, তাই যখন খেতে দিবেন তখন প্রথমেই কিছু অতি ক্ষুদ্র দানাদার খাবার যেমন, কাউন, শরিসা ইত্যাদি পরিমান মত খাওয়াবেন ও পানি খেতে দিয়ে আবারও বিরাম নিয়ে কিছুক্ষন পরে বড় দানার অনান্য যেমন, ধান, চাল , গম, পপকর্ন , বাজরা ইত্যাদি খেতে দেবেন, তাতে দেখা গেছে খাদ্য থলিতে পানি থাকাতে ও অনেক সময় নিয়ে পূর্বের খাদ্য দানা খেতে যেয়ে বিরক্ত হয়ে পরের বার পরিমিত খেতে বাধ্য হচ্ছে।
শুধু এইটুকু বলে আজকের মত বিদায় নিতে চাচ্ছি, যখন, বাজরা, সূর্যমূখী ফুলের বিচি, কাওন, চিনা ইত্যাদির নামও জানতাম না, তখনও কবুতরকে ধান শরীষা খাওয়ায়ে সকাল-সন্ধা উড়াতাম, এখনও উড়াই, শুধু মাঝখানে এখন ভাল ভাল মানের খাবার খাওয়ায়ে একটু বেশী সাপোর্ট নিচ্ছি যেন আরো ভাল হয়, এই ছাড়া আর কিছুই না।
আবারও বলি হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতরের পারফর্ম শুধুই খাদ্য নির্ভর না, এরা জাত নির্ভর, অভ্যাস নির্ভর ও অনুকরন প্রিয়।
ধন্যবাদ, ধর্য্য ধরে পড়ার জন্য।
*** আমি আমার পরিচিত জনদের প্রায় বলি, বছরের অলস সময় গুলোতে যখন উড়াউড়ি করানো না হয়, তখন ফ্লাইং লফ্টের হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতরকে এমন ভাবে মানুষ করো যেন তারা “বেঁচে থাকার জন্য খায়, খাওয়ার জন্য বেঁচে না থাকে”, এভাবেই ওদের অভ্যাস গড়ে তোলো।

ছবি এবং ভিডিও

লিখেছেন -
Khulna Highflyer

No comments:

Post a Comment

কবুতরের হোমমেড হ্যান্ডফিডিং ফর্মুলা

বরাবরের মতো এইবারও বাচ্চাগুলাকে ওদের বাবা-মা খাবার খাওয়ায়...কিন্তু তারপরেও, আমি প্রতিদিনই ওদের একবার করে হ্যান্ডফিডিং করাই ওদের সুস্বাস্থ...