পূর্বের পোষ্টের অনেকের কমেন্ট থেকে দেখলাম, একটা বিষয় খুব বেশী
প্রাধান্য পেয়েছে, সেটা হলো, কি ধরনের খাদ্য খাওয়ালে হাইফ্লাইয়ার কবুতর ভাল
থাকবে ও ভাল পারফর্ম করবে? এবার আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি, ব্রিডার কবুতরকে
সারা বছর ভাল ভাল যত খাবার আছে, খাওয়ান, কোন সমস্যা নেই, কিন্তু যে কবুতর
উড়াবেন তাকে শুধু মাত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ানো
উচিৎ, যাতে করে নির্দিষ্ট মাত্রার দৈহিক গঠন নিয়ে ট্রেনিং এ ও প্রতিযোগীতায়
অংশগ্রহন করতে পারে। তার মানে সহজ কথা এটা দাড়ালো, উড়ানো কবুতরকে সারা
বৎসর ভাল ভাল খাবার না খাওয়ালেও চলবে, প্রয়োজনে আধপেটা খাবার খাওয়ায়ে রেখে
দেওয়া যেতে পারে। আমি পূর্বেই বলেছি, হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতরকে রেসার
কবুতরের শারীরীক শক্তির সাথে তুলনা করা যাবে না, রেসার কবুতর উড়ে দৈহিক
শক্তির জোরে, আর হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ কবুতর উড়ে তার রক্তের গুনের কারনে।
দেখেন না, বাড়ী চোখের সামনে থাকার পরেও নামে না এবং নামতে চাইলেও সহজে
নামতে পারে না। লক্ষ্য করে দেখবেন, ১০-১২ ঘন্টা উড়া কবুতর যখন নেমে আসে তখন
তার কি ভয়াবহ অবস্থা, সে কি ১০-১২ ঘন্টার আগে নামতে পারতো না? কিন্তু
পারেনি তার রক্তের গুনের ও অতিরিক্ত দুর্বলতার কারনে। সুতো ছেড়া ঘুড়ির মত
শেষের ৩-৪ ঘন্টা উড়তে থাকে। একটা ছোট উধাহরন দিলে বুঝতে পারবেন, ম্যারাথন
দৌড়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীরা এক সময় এমন অবস্থায় পড়ে, যে চাইলেও হটাৎ করে
দৌড় থামায়ে দিতে পারে না তার গতির কারনে, ঠিক তেমনি আমাদের একটি বিষয়
মাথায় রাখা দরকার, আমাদের কবুতরের প্রাথমিক ধাপটা পার করায়ে দিতে পারলেই,
বাদবাকিটা সে না চাইলেও উড়তে থাকে। তাই আমাদের সবার একটা বিষয় বেশী নজর
দেওয়া দরকার, সেটা হলো, আমাদের কবুতরের যেন অতিরিক্ত স্বাস্থ্য না হয়। আরো
একটি বিষয়, এরা প্রচুর পরিমানে খাবার গ্রহন করে থাকে কিন্তু তার তুলনায় অতি
স্বল্প খাবার বডি মাস এ রুপান্তরিত হয়।তাই আমার যুক্তি অনর্থক বেশী ভাল
মানের খাবার না খাওয়ায়ে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু দেওয়া উচিৎ। শুধু কিছু
কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, গরমের সময় যেন এমন খাবার না দেওয়া হয়, যাতে
করে শরীর বেশী গরম হয়ে যায়, আবার শীতের সময় এমন খাবার দেওয়া উচিৎ, যাতে করে
শরীর গরম থাকে। অর্থাৎ ওয়েল সীডের ( শরীষা দানা, চিনা, সূর্যমূখী ফুলের
বীজ ইত্যাদি ) যোগানের পরে নির্ভর করবে শরীরের সহনীয় ব্যাপার। ওয়েল সীড কম
বেশী করে দিয়ে ব্যালান্স করা দরকার . আর এছাড়া সারা বৎসর ধান, চাউল, গম,
ছোলা, কালো দানা, ভুট্টা, ডাবলী ইত্যাদি প্রয়োজন মত দেওয়া যেতে পারে। তবে
অতিরিক্ত গরমে ভুট্টা না দেওয়া ভাল এবং পোল্ট্রি ফিড একদম না ব্যাবহার করাই
ভাল। কেননা, প্লোট্রি ফিডে আমিষ জাতীয় উপাদান মিশ্রন করা থাকে যা কবুতরের
জন্য সঠিক না।যা হোক নতুনদের জন্য আমার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি এবং আমি
তাদেরকে এইভাবে জানাতে চাচ্ছি যে, আগামীতে তারা নিজেরাই এক একজন অভিজ্ঞ
কবুতরবাজ হবেন এই প্রত্যাশায় এবং আমার ধারনা ওনারা আমাদের থেকে আরো বেশী
অভিজ্ঞ হবেন, যেটা আমাদের সময় আমরা হতে পারিনি, কেননা, এখন ইন্টারনেটের
বদৌলতে নতুনদের হাতের মুঠায় পৃথিবীর অফুরন্ত তথ্য। নতুনদের জন্য আমার
কবুতরের খাদ্য বিষয়ক ইনফরমেশন এইটাই, আপনারা আপনাদের হাতের কাছে বাংলাদেশে
উৎপাদিত সহজলভ্য যা খাদ্য দানা আছে তাই আপনাদের কবুতরকে খাওয়ান, শুধু মাত্র
খেয়াল রাখতে হবে আবহাওয়া যেদিন ঠান্ডা থাকবে, সেদিন ওয়েল সীডের মাত্রা
বাড়ায়ে দিতে হবে এবং আবহাওয়া যেদিন অতিরিক্ত গরম থাকবে সেদিন ওয়েল সীডের
মাত্রা কমায়ে দিতে হবে। মোট কথা, আমরা যেমন বৃষ্টি হলে খেচুড়ি রেধে খাই,
আবার গরম পড়লে পান্থা ভাত খাই, এরকম আর কি, হা হা হা। এখানে গ্রীষ্মকাল -
শীতকাল কোনো ব্যাপার না, আপনাকে প্রতিদিনই আবহাওয়ার তাপমাত্রার সাথে তাল
মিলায়ে খাদ্য তালিকা তৈরী করা বুদ্ধিমানের কাজ। একবারে সারা বছরের বা মাসের
খাবার তৈরী করে বস্তা ও কৌটা ভরে রাখবেন তা কিন্তু না। আলাদা আলাদা পাত্রে
খাবার মজুদ থাকবে এবং প্রতিদিনই আবহাওয়ার সাখে তাল মিলিয়ে প্রয়োজন মত
খাবার মিশ্রন করে খেতে দিবেন। অনেকে রুটি খাওয়ান, কেন খাওয়ান এটা আমরা
অনেকেই জানি না, তবে প্রধান দুটো কারন, এক নম্বর, দ্রুত হজম হয়ে যাবে এই
কারনে, আর দুই নম্বর, অনেক শস্য দানা আছে যার অরুচি ও তিক্ততার জন্য কবুতর
খেতে চায় না, ফলে গুড়া করে রুটি বানায়ে খাওয়ানো হয়। দানাদার খাবার নিয়ে
আমরা সব সময় চিন্তা করি, কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি? আমাদের কবুতরকে
যে পানি খেতে দেই, তা কতটা স্বাস্থসম্মত? এমনওতো হতে পারে আপনার সরবরাহ করা
পানিতে যথেষ্ঠ আইরোন ও আরসনিক আছে, অথবা প্রচন্ড খারীয় অথবা অম্ল? তাই
বলছি এইগুলোও মাথা রাখা আমাদের জরুরী। সর্বশেষে আজকের মত একটা গুরত্বপূর্ন
কথা না বল্লেই না, সেটা হলো, আপনার হাইফ্লাইয়ার কবুতরের জাতের মধ্যে যদি
উড়া না থাকে, আপনি যতভাল খাবার খাওয়ান না কেন, কোন কাজ হবে না। আপনাকে শুধু
খেয়াল রাখতে হবে এমন খাবার দেওয়া যাবে না, যাতে করে শরীর মোটা হয়ে যাবে,
অথবা রুগ্ন হয়ে যাবে। ------------ চলবে ।।
ধন্যবাদ ধর্য্য ধরে সঙ্গে থাকার জন্য।
**** ভেবেছিলাম এই পোষ্টের থেকে ট্রেনিং এর মুল পর্বে চলে যাবো, কিন্তু
অনেকের খাদ্য ব্যাস্থপনা বিষয় জানার চাহিদা থাকার কারনে এবারও পারলাম না।
আগামী দিন পারবো কিনা, তাও জানি না, হা হা হা। এক খাদ্য ব্যাস্থপনার উপর
পোষ্ট দিতে গেলে আরো ৫ - ৬ টা পর্বে শেষ করতে পারবো কিনা সন্দেহ। সহজ কথা
শুধু এইটুকু জানুন, একজন ভাল হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ পালক হতে গেলে আপনাকে
অনেক গুনের মধ্যে একজন উচুমানের ডায়েটিসিয়ান / নিউট্রশনিস্ট ও হতে হবে,
হা হা হা।
ছবি ও ভিডিও
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
-
ট্রেনিং এ কতগুলি কবুতর এক সঙ্গে উড়ালে ভাল হবে? এটার কোনো ধরা বাধা নিয়ম নেই, যার কবুতর যত বেশী তিনি সেইভাবেই ট্রেনিং দিবেন এটাই স্বাভাবিক। ...
-
বাংলাদেশে প্রাচীন কাল থেকেই কবুতর পালন হয়ে আসছে, বিভিন্ন সময়ে এই দেশে বিভিন্ন শাসন আমল থাকার কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কবুতর এ দেশে এসে...
-
কবুতরের ব্রিড নিয়ে অনেকের ই অনেক ভুল ধারনা আছে বলে আমার মনে হয়েছে যা নতুন কবুতর পালক দের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায় ।তাই এই ব্লগ টি লেখার কথা...
কবুতরের হোমমেড হ্যান্ডফিডিং ফর্মুলা
বরাবরের মতো এইবারও বাচ্চাগুলাকে ওদের বাবা-মা খাবার খাওয়ায়...কিন্তু তারপরেও, আমি প্রতিদিনই ওদের একবার করে হ্যান্ডফিডিং করাই ওদের সুস্বাস্থ...

No comments:
Post a Comment