Thursday, 18 July 2019

ট্রেনিং পর্ব ১১

গত পর্বে উড়ানি কবুতরের কয়েকটি গুনের কথা বলেছিলাম, তার মধ্যে “সাহসিকাতা” একটি বড় গুন, কেননা, আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, যেগুলো প্রচুর ভীতু প্রকৃতির সেইগুলো সার্বক্ষনিক ছুটে উড়ার কারনে তাদের শরীরের এনার্জি দ্রুত লস করে, ফলে দীর্ঘ সময় দম করতে পারে না। এছাড়া অতিরিক্ত ভয়ের থেকে শরীর আড়ষ্ট হয়ে ছাদের বা চালের থেকে সহজে উড়তে চায় না, যতই দাবাড়া দাবড়ি করা হোক না কেন। লাঠি দিয়ে পিটালেও উড়তে চায় না, সোজা কথায় যেটাকে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় ঘ্যাসড়া বলি। কবুতর দীর্ঘ সময় আকাশে থেকে কত কিছুই না ফেস করতে হয় তার এয়াত্বা নেই। যে সব কারনে কবুতর ভয় পেয়ে অনেক সময় উড়তে চায় না তার মধ্যে (০১). কালো মেঘ (০২). আবাবিল পাখি / চামচিকা, (০৩). ঘন কুয়াশা (০৪). আকাশে উড়ে যাওয়া প্লেন অথবা হেলিকপ্টার (০৫). উড়ন্ত বেলুন অথবা ঘুড়ি (০৬). হটাৎ করে অপরিচিত বাহির থেকে আসা কালো/বুনো রঙের কবুতর (০৭). চিল (০৮). চরম শত্রু বাজপাখি ইত্যাদি। কবুতর যদি একটু সাহসী প্রকৃতির না হয়, তাহলে দেখা গেছে হটাৎ করে ভয় পেয়ে ড্রপ করে যায়।তাই আমি মনে করি কবুতরের মধ্যে একটু সাহসী প্রকৃতির যেগুলো সেইগুলোই এই সব বিপদ মাথায় নিয়েই দীর্ঘ সময় দম করে। তবে এখানে একটি বিষয বলা প্রয়োজন, সেটা হলো, মানুষের ক্ষেত্রে একই মা-বাবার ভাইবোনেরা যেমন সমান সাহসী হয় না, তেমনি কবুতরের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গেছে।
ট্রেনিং এর জন্য যে সকল কাজ করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম সেটা হলো ভাল জাতের সুস্থ কবুতর নির্বাচন করা এবং পোষ মানানো।
আমার কাছে ট্রেনিং এর সব থেকে কঠিন অধ্যায় মনে হয় কবুতরকে বাড়ী চেনানো। অনেকে অনেকভাবে কবুতরকে পোষ মানান। কিছুটা সহজ হয় (০-১) পাকের বাচ্চাদের পোষ মানানো, কেননা, (০-১) পাকের বাচ্চারা সহজে পোষ মানে কারন তারা চাইলেও বাসা ছেড়ে বেশী দূরে যেতে পারে না, ফলে বাসার আসে-পাশ্বে থাকতে হয়। কিন্তু (০-১) পাকের বাচ্চাদের চরম শত্রু কাক ও চিল। তাই অনেকে অল্প বয়েসি বাচ্চাদের চিল, কাকের চোখ থেকে বাচিয়ে সামান্য বাসা চেনানোর কাজ সম্পন্ন হলে আবারো বসায়ে রাখেন ৪-৫ পাক পর্যন্ত। বাসা চেনানোর সময় কবুতর যেনো বেশী দূর চলে যেতে না পারে এই জন্য অনেকে কবুতরের পাক সেফটিপিন, সুতা , টেপ দিয়ে আটকায়ে দিয়ে ড্যানার জোর কমায়ে দিয়ে ১০-১৫ দিন ছাদের উপর রেখে বাসার আসেপাশ্বে চেনানো হয়, এর পর যখন দেখা যায় বাসা চিনে ফেলেছে, তখন সেফটিপিন, সুতা, টেপ দিয়ে আটকানো থাকলে সেটা খুলে দেয়। অনেক সময় দেখা গেছে, সেফটিপিন, সুতা, টেপ ইত্যাদি খুলে দেওয়ার পরে ডানায় হটাৎ করে জোর পেয়ে যেয়ে দিক-বেদিক উড়া আরম্ভ করে, ফলে অনেক সময় হারায়ে যায়, তাই অনেক সময় গরম কালে পাকনা ভিজায়ে ছাড়া হয় ফলে পাক না শুকানো পর্যন্ত আর উড়তে পারে না এছাড়াও অনেকে ৯-১০ নম্বর পাক টেপ অথবা সুতা দিয়ে বেধে ড্যানার জোর সামান্য কমায়ে ছাড়া হয়।
অবশ্য আমি একসময় আঠালো মাটি গুলায়ে পেষ্টের মত করে পাখায় প্রলেপ দিয়ে রোদ্রে শুকায়ে ড্যানার জোর কমায়ে রাখতাম এবং বয়সের সাথে সাথে পাক ঝেড়ে অথবা গোছল করার কারনে মাটির প্রলেপ ধুয়ে পরে সব ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যেত।
বাসা চেনানোর জন্য অনেকে বাম ব্যাবহার করেন। বামের উপর কবুতর বসায়ে রেখে বাসার থেকে যতদূর কবুতর দেখতে পায় তার ব্যাবস্থা করা হয়। অনেক সময় দেখা গেছে বাম উচু হওয়াতে কবুতর বামে বসাতে অসুবিধা হয়, তাই অনেকে দুই তিনটা বিভিন্ন উচ্চতার বাম সেট করেন। আবার কেউ কেউ উন্নতমানের বিভিন্ন উচ্চতায় সেট করার জন্য লিফ্ট টাইপের বামও তৈরী করেন।
বিভিন্ন উজ্বল রঙের পতকা বাসার উপর অনেক উচ্চতায় উড়ায়ে রাখা হয়, যাতে করে কবুতর বাসা হারায়ে ফেল্লেও দূর থেকে পতাকা দেখে ফিরে আসতে পারে। অবশ্য দেখা গেছে, সব থেকে লাল রঙের পতাকা বেশী ব্যাবহার করা হয়, কেননা, অনান্য রঙ থেকে লাল রঙ অনেক দূর থেকে দেখা যায়।
------------------ চলবে।।
ধন্যবাদ, ধর্য্য ধরে সঙ্গে থাকার জন্য।
*** আমি কথনও একটু বেশী শব্দ করে ডাকা হাইফ্লাইয়ার গিরিবাজ নর কবুতরকে খুব একটা ভাল পারফর্ম করতে দেখিনি।
*** আপনার উড়ানি কবুতর চোখে ঠিক মত দেখে কিনা এটা নিশ্চয় পরীক্ষা করেছেন, কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন, আপনার কবুতর ঠিক মত কানে শোনে

 ছবি 

 লিখেছেন -
Khulna Highflyer
 

No comments:

Post a Comment

কবুতরের হোমমেড হ্যান্ডফিডিং ফর্মুলা

বরাবরের মতো এইবারও বাচ্চাগুলাকে ওদের বাবা-মা খাবার খাওয়ায়...কিন্তু তারপরেও, আমি প্রতিদিনই ওদের একবার করে হ্যান্ডফিডিং করাই ওদের সুস্বাস্থ...