আমাদের পাড়ার চায়ের দোকাদার, নাম খলিল। আমাদের থেকে ৩-৪ বছরের বড়। আমরা কখনও খলিল অথবা খলিলভাই বলে সম্ভোধন করতাম। যখন ঠেকা পড়তাম, বাকীতে চা খাওয়ার দরকার হতো তখন, খলিল ভাই, হা হা হা। আর যখন কবুতর নিয়ে গপ্পসপ্প হতো তখন খলিল। আর যদি কোনো কারনে খলিলের কবুতর ভাল উড়তো, তখন খলিল ভাই খলিল ভাই। ৮০/৮১ সালে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে অফুরন্ত অবসর পার করছি আর খলিলের দোকানে দিন নেই রাত নেই আড্ডা । খলিলের মাত্র একজোড়া কবুতর। একটা চকরা বকরা খয়ে রঙের নর পারমানেন্ট থাকতো আর মায়া কবুতর প্রায় পাল্টে যেতো। আমাদের কাজ ছিল বেঞ্চে বসে থেকে চা খাওয়া আর কবুতর নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গল্প করা। আর খলিলের সংসার বলতে, একজোড়া কবুতর, একটা বিড়াল আর একটা কথা বলা শালিক। শালিক পাখিটাও সব সময় ছাড়া থাকতো। বিড়াল, শালিক ও ৩-৪ টা কবুতর বিশাল সংসার, হা হা হা।খলিল যখন চা বানাতো, তখন প্রায় সময় নর কবুতরটি মাঝে মধ্যে খলিলের কাধে বসে থেকে ডাকাডাকি করতো।
মাঝে মাঝে খলিলকে অনুরোধ করতাম তার নর কবুতরটি উড়ায়ে দেখানোর জন্য। খলিলও বুঝে ফেলেছিল আমরা তার চায়ের দোকানে একটা কারনেই আসি ওর ঐ নর কবুতটার উড়া দেখার জন্য, চা খাওয়াটা মুখ্য ব্যাপার ছিল না। ৩-৪ কাপ চা পান করার পরেই খলিলের মন গলতো, হা হা হা।
whispering যে একটা কবতুর কতটা বুঝে সেটা খলিলের নর কবুতর আর খলিলের মধ্যে কথোপকথন না হলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না। যা হোক, কিছুক্ষন পরে খলিলের ঘাড়ের থেকে বাজী ধরতো আর সোজা উপরের দিকে যতক্ষন চোখে মিলায়ে না যাবে ততক্ষন বাজী চলতে থাকতো। তাই দেখে আমরা যে আনন্দ পেতাম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কবুতরটি খুব বেশীক্ষন উড়তো না, বড়জোর আধা ঘন্টা, তার পর ড্যানা ছেড়ে দিয়ে সোজা দোকানের পাশ্বে বড় আম গাছের ডালে এসে বসতো, আর যতক্ষন খলিল এ্যালমুনিয়ামের চায়ের বাটিতে চামুচ দিয়ে নিজেস্ব ভঙ্গিতে না ডাকবে ততক্ষন বসে থাকবে। মুখে ডাকলেও আসবে না। আর ঘাড়ে নেমে আসার পরে খলিল চায়ের চামুচে সামান্য পানি ধরবে, সেটা খেয়ে আবারো খলিল মৃদু স্বরে ফিস ফিস করে কি যেন বলতো, কখনো খোপে অথবা আবারো আম গাছে বসে ডাকাডাকি করতো।
যা হোক, খলিল ও আমাদের কাছে এই কবুতরটির গাছে বসার বিষয়টি কোনো দোষের ছিল না। কিন্তু একটা অপবাদ ঐ কবুতরটির ছিল, সেটা হলো “গ্যাছো কবুতর”
------------------------ চলবে ।
ধর্য্য ধরে সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
*** যারা বই পড়ে সাতার কাটা শিখতে চান, তারা ভুল করবেন। অনেকেই প্রথম থেকে আমার পোষ্টগুলো না পড়ে অথবা না বুঝে এখনও ভাল কবুতর চেনার পদ্ধতি কি? জানতে চাচ্ছেন, তাদের আবারও বলি ভাল কবুতর চেনার থেকে খারাপ কবুতর চেনা সহজ, আর ভাল কবুতর কতটা ভাল তা আকাশে না দিয়ে চেনা সম্ভব না। এই সহজ কথাটা যদি কেউ না বুঝতে চান অথবা বিশ্বাস না করেন, আমার কিছু করনীয় নেই, কেননা, আমি সব সময় খারাপ কবুতর চিনে সে গুলো বাদ দিয়ে দেই এবং অন্যগুলি আকাশে দিয়ে উড়ায়ে পরিক্ষা করে ১০০% নিশ্চিৎ হই কতটা ভাল?
লিখেছেন-
No comments:
Post a Comment